মুজতাহিদ ফারুকী’র কবিতা

 
কী ভীষণ অচেনা স্বজন

কিছু রাত আসে, কার্নিশে ঘুঘু পড়ে, কালো জলপিপি 
ঢোকে ঘুলঘুলি ঠেলে
শুকিয়ে ওঠা ঠোঁট ভুলে যায়, একদিন কেউ সেধে
চুমু দিয়েছিল,
বুকে বুক রেখে খুব আস্তে বলেছিল, নাও।
তখন লিপজেলে জুঁইগন্ধী আর্দ্রতা খুঁজি, ওভারকোটের মতো
পরে নিই স্তব্ধ রাতটিকে, যেন রাতই প্রথম প্রেমিকা
তারপর পরাস্ত শরীর টেনে নির্জনতার দিকে যাই
‘নির্জন’ আমার বাড়ি। খুব ভেতরে। 
আসলে ওটা খানাবাড়ি, জল আলো নেই, আসবাবও
শুধু এক কোণে একলা বসার একটা চৌকো পাথর 
পাহাড়ের মতো ভারী।
এ আমার তেরো নদী দূর অভিবাস, দ্বিধাগ্রস্ত নীল সামিয়ানা ঘিরে ধূ ধূ মরীচিকা,
ধোঁয়াশা ধূসর এক স্বজনের সাথে চুপিচুপি
বোটানিতে একা হেঁটে আসা।
তার সাথে এক ছাদে বাস, সারাবেলা দেখা হয়, হাই হ্যালো 
কী ভীষণ অচেনা তবুও সে!

প্লাটফর্মে

বন্ধুকে দেখতে গেলাম 
বাড়িওলি বলল, নেই, বাড়ি ছেড়ে গেছেন
অন্য পাড়ায়, অথবা শহরে।
নতুন ঠিকানা?
মোবাইল, ল্যান্ডফোন?
দেননি; বলেছেন, ওখানে ঠিকানা লাগে না।
নেটফেট নেই।
সময় হলে গাড়ি আসে, উঠলেই নতুন বাড়ি।
সেদিন থেকে প্লাটফরমে বসে, 
গাড়ি আসবে, বন্ধুকে দেখতে যাবো।
গাড়ির সময় হয়নি।

সমব্যথী

হেই মাঝিয়া,
ঘাট বইঠে তকদির চাপছিস
উহার কসুর কাঁহে, বোল?
বোল তো তু, পানি শুখি গেলে
কুন গাঙে ডুবাবি ই নাও?
আঁখোপে ধরেক অত জল? 
কহে কি, 
হামাক লিয়ে চল
গলা ফাড়কে কানদি যুদি দুহে
নাও ভাসা পানি ভরবি না?

গাছের কথা

ইদানীং গাছের দিকে তাকাতে পারি না
ফ্যাকাশে রক্তশূন্য শরীর, আছে শ্বাসটানও
পিঁপড়েরা বিষদাঁতে কচি ডগা কাটে
হাওয়া এলে ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে ডাল
হলদেটে চোখে তার তীব্র অনিশ্চয়
চোখে চোখ রাখতে পারি না। 
কতদিন বৃষ্টি নেই!
ফেসো চুল অযত্নের সাক্ষ্যে রি রি ওড়ে
একটিও ফুল ফোটেনি কখনও
ফাল্গুন উঁকি মেরে গেছে আনবাড়ি। 
রাতভর পাশে জেগে
টের পাই বোবা কাতরানি
পালা শেষ জোনাকিরা যখন ঘুমায়
তখন কি দুধসাদা পঙ্খিরাজ আসে
ছদ্মবেশি গাছ ধরে অশ্বারোহী সাজ?
ধূসর পাতার জালে আড়মোড়া ভেঙে 
চাঁদ সুলতানা জাগে ফানা-ফিল্লায়?
কার সাথে হাত নেড়ে এত কী সে কয়?
সিফাত কি নড়ে ওঠে আঁধার কবরে
আলোর বোরাক তার সখা নাকি? অন্ধকার...?
সব জানলার কাচ শুষে নিলে ঘণ্টার ধ্বনি
জোছনার বুড়ি লেপে টক চোখে মায়া
সান্ত্বনার ঢাল হয় তারার বুদবুদ
ঘুমের বারান্দাজুড়ে পাতার ফরাস পাতে
স্তব্ধ বোধিগাছ।
বারবার ভুল হয়, তবু গনি ১০০ থেকে এক।

No comments

Powered by Blogger.