অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
কুমড়ো শাক
অমলা দেবী অধুনা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। রোগটা আগে ছিল না। বিগত বছর দুই হলো দেখা দিয়েছে। ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধের সঙ্গে নিয়মিত সকাল সন্ধ্যায় একটু হাটতে যান তিনি। দিল্লীতে ছেলের কাছে তিনি বেড়াতে এসেছেন। তাঁর নিজস্ব বাড়ি রাঁচীতে। নতুন পাড়া, নতুন পরিবেশ। জনবসতিও খুব কম। তাই ফাঁকা রাস্তায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে তাঁর ভালোই লাগে। এখন পর্যন্ত যে কটা বাড়ি স্বগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেই তুলনায় সীমানা ঘেরা ফাঁকা জমির সংখ্যাই বেশি। এর দ্বারা স্পষ্ট প্রমানিত যে বেওয়ারিশ একটিও নয়, সবকটি মালিকানাভূক্ত।
সেদিন বিকেলে পায়চারি করতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ে একটি ফাঁকা জমির উপর অযত্নে বেড়ে ওঠা কিছু তরতাজা কুমড়ো শাকের ঝোপ। এই রাস্তায় ইদানীং রোজই যাতায়াত তবু এতদিন কেন চোখে পড়েনি এই কথা ভেবে তিনি আশ্চর্য হন। হয়তো এই কারণেই লোকে বলে- মানুষের চৈতন্যই হলো শেষ কথা। ইন্দ্রিয়গুলি উপলক্ষ মাত্র। দেখে থাকবেন হয়তো কিন্তু অন্যমনস্কতার কারণে এই পরম লোভনীয় বস্তুটি দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গিয়েছিল। আজ হঠাৎ আকস্মিক ভাবে আবিস্কার করতে পেরে তিনি যারপরনাই বেজায় আনন্দিত। কত মামুলি জিনিষ অথচ দিল্লী শহরে দুস্প্রাপ্য।
সূর্য ঢলে পড়েছিল অনেকক্ষণ। সন্ধ্যেবেলায় গাছেরা নাকি বিশ্রাম করে, গাছে হাত দিতে নেই গাছের পাতা বা ফুল ছিড়তে নেই সেই ছেলেবেলাকার শোনা কথা। তাই সংস্কার বশতঃ অবেলায় গাছে হাত দিতে তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না। অমলা দেবী চারিদিকে একবার শুধু নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভৌগলিক অবস্থানটা জরিপ করে নিলেন মানসচক্ষে। যাতে পরের দিন সঠিক চিনে নিতে পারেন জায়গাটা, সেদিন এই সামান্য কারণে তাঁর মনটা আনন্দে উচ্ছল হয়ে উঠেছিল। দিল্লী শহরে কুমড়ো শাকের দেখা পাওয়াটা যেন রীতিমত ভাগ্যের কথা।
বিয়ে হওয়ার পর থেকেই তিনি প্রবাসী বাঙালি নামে পরিচিতা। স্বামীর চাকরির সুবাদে তাঁকে আজ পর্যন্ত কত জায়গাতেই না ঘুরে বেড়াতে হয়েছে! যদিও দিল্লী শহরের ন্যায় রুক্ষ প্রাণহীন জনপদ তামাম দুনিয়ায় আর একটিও আছে কিনা তা নিঃসন্দেহে প্রশ্ন সাপেক্ষ। এই শহরের এমনই গুণ যে, বাঙলার অজ পাড়া গা থেকে আসা বাঙালিরা শাপের খোল পাল্টানোর মতো বাঙালিয়ানাকে চিরতরে বিসর্জন দিয়ে হিন্দুস্থানী হওয়ার অভিনয় করতে বেশি পছন্দ করেন। তাঁরা বাঙালি শুধুমাত্র দুর্গা পূজোয় ভোগ খাওয়ার বেলায়।
দ্রুত পদক্ষেপে তিনি বাড়ির দিকে এগোচ্ছিলেন এই আশা নিয়ে যে, ছেলের বৌকে তিনি নতুন একটি সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন। মনে মনে ভাবেন- নিজের হাতে তিনি মুগের ডাল দিয়ে কুমড়ো শাক রেঁধে খাওয়াবেন পুত্রবঁধূ মমতাকে। কে জানে ওরা এইসব কোনদিন খেয়েছে কিনা। ও যে ছোট থেকেই দিল্লীতে মানুষ। কিসে রসনা তৃপ্ত হয় এখনকার ছেলে-মেয়েরা জানবে কি করে ?
ঘরে ঢুকে কথাটা যেন সেই মূহুর্তে ব্যক্ত না করলেই নয় এমন একটা ব্যস্ততার ভাব নিয়ে তিনি মমতার উদ্দেশ্যে বললেন- তুমি কুমড়ো শাক খেয়েছো কোনদিন বৌমা?
মমতার অবাক প্রশ্ন – কুমড়ো শাক? ছিঃ! ওগুলো আবার লোকে খায় নাকি?
-কি বলছো তুমি বৌমা? পায় না তাই খায় না। পেলে চেটেপুটে খাবে। খুব সুস্বাদু এবং উপাদেয় খেতে অমলা দেবী বলেন, না খেলে এর স্বাদ জানবে কেমন করে?
-মা, এখানে তো এই জিনিষ পাওয়া যায় না।
মমতাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অমলা দেবী বলেন- পাওয়া যায় না ঠিকই কিন্তু আজ আমি এক জায়গায় দেখে এসেছি। আজ রাত হয়ে গেল বলে আর নিয়ে এলাম না। কাল সকালে ব্যাগ আর কাঁচি নিয়ে যাব যতটা পারি কেটে নিয়ে আসবো।
শাশুড়ি মাকে সাবধান করতে গিয়ে মমতা জিজ্ঞাসা করে- কারও বাগানের নয় তো?
-না বৌমা, ওর কোন স্বত্বাধিকারী আছেন বলে তো মনে হলো না। ফাঁকা জমির উপর এক ধার দিয়ে ঝোপটা বেড়ে উঠেছে। ও জিনিষ গরুতেও খায় না। কিন্তু বাঙালরা খায়। আর এখানকার মানুষরা চেনে শুধু মূলো, গাজর, ভিন্ডি, ডাল-রুটি, ছোলা-রাজমা আর পনির। তাই এখনো কারও ছোবল পড়েনি। ছোবল পড়লে কি আর দেখতে পেতাম?
অমলা দেবী যথারীতি পরের দিন ভোর বেলা প্রাতঃভ্রমনে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে কাঁচি আর ব্যাগ নিতে ভোলেন না। কিন্তু সেদিন স্বাভাবিক কারণে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হলেও ভ্রমন করা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হয় না। মানুষের হৃদয়ে স্থিত প্রলোভন বস্তুটি এমনই ভয়ঙ্কর! কুমড়ো শাক যেন তাঁকে কেবলই হাতছানি দিয়ে নিকটে যাওয়ার আহ্বান করছিল। সবুজ সজীব পাতার ফাঁকে সদ্য ফুটন্ত হলুদ রাঙা ফুলগুলি যেন বাড়তি শোভা বর্দ্ধন করছিল। তাকালে চোখ দুটো আবেশে জড়িয়ে আসছিল। গরম ভাতের সাথে বেসন সহযোগে টাটকা তাজা কুমড়ো ফুলের বড়া! আঃ হা, কী উপাদেয় খাদ্য, যেন রয়্যাল ডিস। হবেই বা না কেন? সম্রাট বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা কী মানুষ নয়? শুনেছি স্বয়ং আকবর নাকি সজনে খেতে ভালোবাসতেন।
অমলা দেবী নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলেন না। হাতে ধরা ছোট আকারের কাঁচির সাহায্যে লতানো ডালগুলি কেটে কেটে তিনি ব্যাগে ভরছিলেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা ডাল তিনি কেটে ফেলেছিলেন। হঠাৎ সেই মূহুর্তে পাশের বাড়ির ছাদের উপর থেকে একটি তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলে চিৎকার করে তাঁর মায়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে – মাম্মী, (দূর থেকে অবশ্য শুনতে লাগছিল মমি) জলদি আও, সীতাফল কা পের কিসিনে কাট লিয়া।
অমলা দেবী ভয় পেয়ে এদিক-ওদিক সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকান। যদিও পালাবার চেষ্টা করেন না। কারণ তাতে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। লোকে হয়তো তাড়া করতে পারেন। দাঁড়িয়ে থেকে তিনি আসণ্ণ বিপদের মোকাবিলা করার জন্যে সাহস সঞ্চয় করতে থাকেন।
প্রায় চল্লিশ-বেয়াল্লিশ বছর বয়স্কা এক ভদ্রমহিলা তদন্ত করতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরনে এতদ্দেশীয় পরিধেয় সালওয়ার-কামিজ। শাখা- সিঁদুরের বালাই নেই। বিধবা না সধবা বোঝার উপায় ছিল না। মায়ের পেছন পেছন ছেলেটিও এসে হাজির হয় ঘটনাস্থলে। পরিবারটি যে বাঙালি তা প্রথম দর্শনে বোধগম্য হচ্ছিল না। ভাব-ভঙ্গীমায় অবাঙালিয়ানা মেজাজের আভাষ পাওয়া যাচ্ছিল পুরো মাত্রায়। ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে এলেও মাতৃ স্থানীয়া অমলা দেবীর কাছে এসে মহিলাটি যেন নিজের মধ্যেই লজ্জা ও সঙ্কোচে আড়ষ্ট যান এক লহমায়।
অমলা দেবী যে নিঁখুত বাঙালি তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সিঁথিতে সিঁদুর, লালপাড় যুক্ত সাদা শাড়ি, গৌরবর্ণা বাহু যুগলে শাখা-পলা, গাত্রবর্ণের সাথে মিশে যাওয়া সোনার চুরি শ্রদ্ধায় আপনিই মাথা নত হয়ে যায়। তাছাড়া সকাল বেলায় মায়ের বয়সী ভদ্রমহিলার সঙ্গে সামান্য কুমড়ো শাক নিয়ে ঝগড়া করাটাও অশোভনীয়। মহিলা আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে বলেন- আপনি থাকেন কোথায়? এর আগে আপনাকে তো কখনো দেখিনি।
-তুমি ঠিকই বলছো, আমি এখানে থাকি না। আমার বাড়ি রাঁচীতে। এখানে ক’দিনের জন্যে আমি আমার ছেলের কাছে বেড়াতে এসেছি। একটু থেমে অমলা দেবী আরো বলেন, আমার বৌমা কোনদিন এই কুমড়ো শাক খায়নি। কেমন করে খেতে হয় তাও জানে না। ওরা এপার বাঙলার বাঙালি তো তাই জানবে কি করে? দেখলাম খালি জায়গায় অনাদরে অবহেলায় গাছটি বেড়ে উঠেছে তাই একটু কেটে নিয়েছি। গাছটির মালিক যে তোমরা তা কেমন করে বুঝবো বলো? আমার অন্যায় নিও না যেন। বরং কাটা শাকটা তোমরাই রেখে দাও। এই গাছ কাটলে খারাপ হয় না। দেখবে দু’দিনে ডাল-পালা মেলে আবার বড় হয়ে উঠবে।
-এ কি কথা বলছেন আপনি? আপনার পছন্দের জিনিষ আমি নেব কেন? আপনার যখনই মন করবে তখনই এসে নিজের হাতে কেটে নিয়ে যাবেন।
মহিলার মিষ্টি-মধুর স্বভাবে অমলা দেবী মুগ্ধ হয়ে যান। মহিলাটির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন- তোমাদের দেশ কোথায়? দিল্লীতে কত দিন আছো?
মহিলাটি জবাবদিহি করেন এই বলে-ওপার বাংলা। দিল্লীতে আছি প্রায় সাত বছর ।
-ওপার বাংলা বলতে কোথায়? অমলা দেবীর কৌতূহলী প্রশ্ন।
-আমার বাপের বাড়ি ছিল পাবনা জেলার রুদ্রকর গ্রামে। আমার বিয়ে হয়েছে বরিশালে। তবে আমাদের একজনও দেশের বাড়ি দেখিনি। শুধু শুনেছি।
অমলা অবাক হয়ে বলেন- সেকি গো! তুমি যে দেখছি আমার মায়ের গ্রামের লোক। আচ্ছা, তোমার বাবার নাম কি?
মহিলা উত্তরে জানান- স্বর্গীয় বাসুদেব চক্রবর্তী। চক্রবর্তী আমাদের পাওয়া উপাধি। আমরা আসলে বন্দ্যোপাধ্যায়।
তোমার বাবাই কি লন্ডনে উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্তির জন্যে পড়তে গিয়েছিলেন? অমলা দেবীর প্রশ্ন।
-হ্যাঁ, একটু থেমে মহিলা জানতে চান, আপনি কী করে চেনেন আমার বাবাকে?
-আমার ছোটবেলায় মায়ের মুখে বহুবার তাঁর নাম শুনেছি। বিশেষতঃ তাঁর কথা আমার মনে আছে এইজন্যে যে, প্রথম ভারতীয় এবং বাঙালি হিসেবে লন্ডনে যাওয়ার গৌরব যেমন রাজা রামমোহন রায়-এর ঠিক তেমনি রুদ্রকর গ্রামের মুখ উজ্জল করেছিলেন তোমার বাবা। তোমার বাবা, সম্পর্কে তিনি আমার মাতুল। আজ বাহাণ্ণ বছর হয়ে গেল দেশ বিভাজনের। এখন আমার বয়স তেষট্টি। তাই বুঝতেই পাচ্ছ আমি তখন কত ছোট ছিলাম। আমার ছোটবেলায় তোমার বাবাকে আমি দুই-একবার মাত্র দেখেছিলাম। তাঁকে ভালো করে চেনার কোনদিন সুযোগই পাইনি দ্বিতীয়তঃ তোমার বাবা হলেন আমার মায়ের তরফের আপন খুরতুতো ভাই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে পরে তাঁর বাপের বাড়ির নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা পর্যন্ত পর হয়ে যান। সেই কারণে মায়ের বাড়ির লোকেরা তাঁর সন্তানদের ক্ষেত্রে হয়ে যায় অনাত্মীয়। দিনে দিনে তাঁদের সাথে ব্যবধান ক্রমশঃ বেড়েই চলে। তৃতীয়তঃ আমার বিবাহের অনেক আগেই আমার মা মারা গিয়েছিলেন। তোমাদের বাড়ির সাথে আমার সম্পর্কটাও ঐখানেই ছিণ্ণ হয়ে গিয়েছিল। অমলা দেবী এবার একটু হেসে বললেন, এই মূহুর্তে তুমি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছো কি? তুমি আর আমি কে? কোন সম্পর্ক সূত্রে আমরা একে অপরের সঙ্গে বাঁধা মহিলাটি আনন্দাতিশয্যে চিৎকার করে বলে ওঠেন- তাহলে আপনি আর আমি দুই বোন?
-বোধহয় তাই। অমলা দেবী মাথা নেড়ে সন্মতি সূচক ইঙ্গিত করেন। এক মূহুর্ত নীরবতা পালনের অব্যবহিত পরে তিনি নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন এই বলে – আমার মা ছিলেন রুদ্রকর জমিদার বংশসম্ভূত কন্যা। এতবড় সত্যি কথাটা এখন আর কারো কাছে উদাত্ত স্বরে মুখ ফুটে বলতে পারি না। লোকে অবিশ্বাস করবে বলে, বলতে সাহস পাই না। লজ্জা করে। সঙ্কোচ হয়। আমার মাকে বিনা চিকিৎসায় খাদ্যাভাবে অকালে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। আজ তোমাকে দেখে আমার শুধু মায়ের কথা মনে পড়ছে।
-দিদি, আপনি দয়া করে আমার ঘরে ঢুকে একবার পায়ের ধুলো দিন নইলে আমার অকল্যান হবে। আপনি আমার বাপের বাড়ির লোক কথাটা বিশ্বাস করতে পারছি না। এ যে আমার পরম সৌভাগ্য। অযত্নে অবহেলায় লালিত এই কুমড়ো শাকের দৌলতে আমি আজ যে জিনিষ লাভ করলাম তা জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলতে পারবো না। সবটুকু কৃতিত্বের অংশীদার এই কুমড়ো শাক। ভাগ্যিস আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তা নাহলে আজ একই পাড়ায় থাকা সত্ত্বেও একে অপরের অচেনা রয়ে যেতাম। আসুন ভেতরে আসুন। আপনি আমার ঘরের লোক। আর আমি কিনা ছেলের চিৎকারে আপনাকে বাঁধা দেওয়ার জন্যে ত্রস্ত পায়ে ছুটে এসেছিলাম? ছিঃ ছিঃ বড় অন্যায় হয়ে গিয়েছিল আমার।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/samoiki
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801720070848
🔗 E-MAILL
samoikionline@gmail.com

No comments