কবিতা লেখার প্রেরণা পাই অন্তর ও বাহির থেকে ।। মৃগাঙ্ক শঙ্কর পোদ্দার

 
মৃগাঙ্ক শঙ্কর পোদ্দার’র কবিতা ভাবনা
কবিতা লেখার প্রেরণা পাই অন্তর ও বাহির থেকে

কাব্য ভাবনায় নিজেকে তুলে ধরার অবকাশ আমি মাঝে মাঝে পাই, সবসময় পাই না। আমি ‘বাংলা’ ভালোবাসি। অতি সুন্দর তার চলন, তার রূপ। স্বপ্ন আমি দেখি, একদিন আমরা সকলে, সারা বিশ্ব এ ভাষায় কথা বলছি। তার চলনে সারা বিশ্ব আবিষ্ট। আমি কষ্ট পাই বর্তমান সমাজে এ ভাষার, তার ব্যবহারের বিকৃতি দেখে। মানুষ ক্রমশঃ অনুকরণ প্রিয় হতে হতে নিজের পরিচয়কেও অন্য ছাঁচে ঢেলে দেয়ার নির্মম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে- এ লজ্জা! আমি এই লজ্জাকে আমার ভেতর থেকে অনুভব করি। এ আমার সম্মান!

কবিতা লেখার আগ্রহ, বলা ভালো প্রেষণা, আমি ভেতর থেকে পাই। প্রেরণা পাই দু’দিক থেকে- অন্তর ও বাহির। ছোটো বেলা থেকেই স্বাভাবিক ঢঙে কবিতার প্রকাশ চলে আসে-এর নিরোধ হয় না, করা যায় না, নিরোধ আমি করিও না। তবু ভুলে গেছি কত! লেখা-রূপ ছাড়াই ওরা হারিয়ে গেছে অনেকে। অনেক কিছুই আজ অন্ধকারে, বহু অযত্নে, আলস্যে, বিরুদ্ধ আবহের পরিমণ্ডলে। শুধু ‘আমি’টুকু রয়ে গেছি নানান পরিবর্তনের মাঝখানে! একই রকম, চির স্নিগ্ধ সে ‘আমি’! তাই ওরা আজও আসে, ‘তবু’ ভালোবাসে বলে। আমি ওদের এখন কিছুটা ধরে রাখতে পারি, ওরাও ধরা দেয় ভালোবেসে। আমি কবিতার মধ্য দিয়ে, লেখায়, রেখায় সমাজের আবর্জনা দেখিয়ে দিই, সক্কলে দেখে- ধ্রুপদের বহু জির্ণ শতচ্ছিন্ন কঙ্কাল। আমি স্মৃতির ভেতরে উঁকি দিই, স্মৃতিকে জাগাই- দেখতে, দেখাতে বাধ্য করি আমাদের আসল স্বরূপ- মানুষই তো ছিলাম, আজ এ কোন জাত! কত শিল্প, কত কারুকাজ, গান কত! কত কথা-লেখা, হয়তো বা রেখাই- আরো কত কি! শেষ তার নেই জেনো কোনো দিন, থেমে যাবে যদিও বা এ হাতের লেখা; রেখার আলাপন যাবে থেমে, তবু, থেমে যাবে না কোনো কিছুই, কারুকাজ থামবে না। আর একটি হাতের ছোঁয়ায়, সেই চির ‘আমি’ রয়ে যাবে সময়কে ছাপিয়ে, কোনো ভয় তাকে ছোঁবে না কোনো দিন।

কালো নিশিথের শেষে ভোর দেবো আমি- এ আমার চির অঙ্গীকার। তাই কিছু পথ হেঁটে আরো অনেকটা পথ হেঁটে যাবো বলে পণ করে আছি। পড়াবো, পড়া শেখাবো, লেখা ধরবো, লেখা ধরাবো, আঁকা শিখবো, আঁকা শেখাবো, আমি গড়বো, গড়ে দেবো, যেন গড়ে নিতে পারে আমার আগামীর অঙ্কুর যত আছে। ওরা চির সবুজ হোক। হলুদ ওরা হয়ে যাবে না, নুয়ে পড়বে না আর নকলের ভারে। আমি যদি বীজ হই, ওরা চারা, ওরা গাছ, ওরা বৃক্ষ। সমাজের সেই ‘ওরা’ দেবে ফসল আবার শত হাজারটি বছর ধরে। তেমনটি করে সমাজের কাছে আপন হব আমি, চির ‘আমি’। রেখে যাবো তাকে জ্যোৎস্নার মত, যা কিনা বিনা বর্ষার রাতে প্রাণে প্রাণ এনে দেয়। খুব সুখ হয়। আমি বিপ্লব।

গান গেয়ে জাগাবো, কথা দিয়ে ভোলাবো সেই চির ‘আমি’, কাজ করে যাবো, কাজ দিয়ে রেখে যাবো আমি সব পেয়ে যাওয়া। শপথ নিইনা, নেইইনি কোনো দিন। কিছু একটা আলো চোখে নিয়ে পথটুকু চলি দৃঢ় মনে। এইটুকু সার। সে এক সঙ্কল্পবিদ্ধ মন, আমিই জানি কেবল। তার সৌন্দর্য্য আছে। শপথের কাঠিন্য নেই। লোক জানাজানি নেই।

যেটুকু বর্ণনা লেখা হলো, অনুরোধ এই যে, এইটুকু বলা আজ থাক। বাকি আর কিছু রয়ে যাক। যদি ভালো লাগে, রেশ টুকু লেগে থাক চির অম্লাণ হাসিটুকু ধ’রে। লেখা-শিল্প ছাড়াও তার পাশাপাশি আমার অন্যান্য সৃজনশীল শিল্প-কর্ম যাকে বলে ক্রিয়েটিভ আর্ট, সেইটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি কোনো কোনো সময়। মাটির কাজ, চকের কাজ, হ্যাঁ চকের কাজ, যে চক দিয়ে আমরা শিক্ষক, শিক্ষিকারা বোর্ডে লিখি, তাই দিয়ে ছোটো ছোটো মূর্তি তৈরী করে আমার কখনো কখনো বেশ সময় কাটে। আমার ভালো লাগে। আমি খুব বেশি আলোচনায় থাকি না। আমি একা থাকি আমাতে বিভোর। যে আলোচনায়, কোনো নতুনত্ব থাকে না, বিপ্লব থাকে না, সৃজন থাকে না, তাকে আমি আড্ডা বলি না, সেটি আমার কাছে সময় নষ্ট। সময়নষ্ট আমার একেবারে না পসন্দ। মানুষ আসুক, মানুষ মিশুক, মানুষ সৃষ্টিশীল হোক- সে আড্ডাবাজ হোক এই ভাবে। সে কথায় কাজ নেই, যে কথা আমরা দৈনন্দিন নিত্যকাজের আলাপ করে ব্যয় করে থাকি। সে কথা প্রেম নয়, যে কথায় এমন সৃষ্টির উৎসাহ না থাকে, প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া না থাকে। সে আলাপ প্রেম তো নয়ই, যে আলাপে চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটুকু থাকে। সম্পর্কের মাঝে সম্পর্ককে ছাপিয়ে যাওয়ার নাম প্রেম! আমি সেই প্রেম সাথে নিয়ে চলি পথ। যদি ভালো লাগে আপন করে নাও, আমি তোমার হয়েই আছি সেই কোন চিরকাল থেকে! তুমি জানোনি! এই তো জেনে গেলে!

No comments

Powered by Blogger.