কবিতা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম ।। লাবণ্য সীমা

 

কবিতা হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম
লাবণ্য সীমা

মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য মানুষের রয়েছে তীব্র আকাঙ্খা। সেই মনের ভাব যদি প্রকাশ করা যায় ছন্দে ছন্দে, তাহলে তো আকাঙ্খার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। সাহিত্য হচ্ছে সেই আকাঙ্খা প্রকাশের তীব্র এক রূপের নাম। সাহিত্যে রয়েছে বিভিন্ন শাখা এবং প্রশাখা, যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের আকাঙ্খা বা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।

কবিরা সর্বদা তাদের নৈপুণ্য ব্যবহার করেছেন সামাজিক সমস্যা এবং অন্যায়ের উপর আলোকপাত করতে, তাদের শব্দ ব্যবহার করে পরিবর্তনকে অনুপ্রণিত করতে এবং চিন্তাকে উস্কে দিতে। প্রাচীন গ্রীক ট্র্যাজেডি থেকে আধুনিক প্রতিবাদী কবিতা পর্যন্ত, কবিতা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

প্রায় ২৯ বছর ধরে লিখছি। আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপট যখন অবলোকন করি তখন নানা রকম প্রশ্ন মনের মধ্যে ভাবনার সৃষ্টি করে। মনের জানালায় কড়া নাড়ে, মস্তিষ্কের সকল শিরা উপশিরায় ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতে থাকে। হাজারো শব্দগুচ্ছ দোদুল্যমান দোলায় জাগ্রত করে মনের ভাবনাগুলোকে আর তখন কলমে অংকিত হয় কবিতা, উপন্যাস, গল্প।

নিজ ভাবনাগুলো আপনা থেকেই রঙ জমায়। কবিতা শুনতে অনেক ভালো লাগে। আর শুনতে শুনতেই একদিন নিজেও লেখা শুরু করে দিলাম।

আমার কবিতায় আমি চেষ্টা করি কিছু মেসেজ দেবার। আমি বেশির ভাগ লেখালিখি নারীদের নিয়ে।

নিজেকে যখন সাহিত্যের একজন ভাবি তখন আমার দায়বদ্ধতাও রয়েছে। আমি মনে করি আমাদের লেখাগুলো পাঠকের দোড় গড়ায় পৌঁছে দেবার কাজটাও আমাদের। নিজে একজন ভালো পাঠক না হলে কখনো ভালো লেখক হতে পারবে না। একজন পাঠকই একসময় হয়ে ওঠে একজন কবি সাহিত্যিক কিংবা উপন্যাসিক।

কবিতাকে নিজের মাঝে লালন করে তার সৃষ্টি থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাঠ করে তার ভেতরের নির্যাস থেকে রস আস্বাদন করে নিজের মেধাকে বিশ্লেষণ করে লেখে যেতে পারলেই আমাদের কলম থেকে ভালো কিছু লেখা আসবে। আমি মূলত সে চেষ্টায়ই করে যাচ্ছি।

কবিতা, কাব্য বা পদ্য হচ্ছে শব্দ প্রয়োগের ছান্দসিক কিংবা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস- যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত সৃষ্টির উদাহরণ। পৃথিবী নামক গ্রহের তাবৎ বিষয়কে পুঁজি করে কবিতা ফলত সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। কাঠামোর বিচারে কবিতা নানা রকম। যুগে যুগে কবিরা কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছেন। কবিতা শিল্পের মহোত্তম শাখা হিসেবে পরিগণিত।

কবিতা নিয়ে আমার ভাবনায় একটি চেষ্টা আমি কবিতার কথা বলছি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি ছন্দ, একটি সুরের আধার; যার তাল, লয়, সুর এক হয়ে লিপিবদ্ধ করে একটি কবিতা। সৃষ্টির প্রাম্ভ থেকে আজ অবধি জীবন থেকে ক্ষয়ে যাওয়া ঘটনাবহুল প্রতিটি ক্ষণ, এক একটি কবিতা। 

আমাদের ভালোলাগা, মন্দ লাগা, সেই প্রশান্তি, স্বস্তিটুকু স্মৃতি আকারে প্রকাশিত রূপ মূলত একটি কবিতা।

একটি কবিতার পটভুমি হলো কল্পনা, যার মৌলিক বহিঃপ্রকাশ হলো কবিতা। কবিতা মূলত একটি রূপকার অধ্যায়। যার সুগঠিত শব্দচয়ন তার কল্পনার রেনু ছড়ায়। প্রকৃতি বলো আর মানব মনোশৈলী বলো তার রূপ রস নির্যাসিত হয়ে পেখম মেলে গল্প, উপন্যাস আর কবিতায়। নারীর চোখের গভীরে যে বিশ্বজগৎ লুকিয়ে থাকে সেই গভীরতার প্রকাশও কিন্তু হয় কবিতায়। মানের নারীর চোখের গভীরতাই কবিতা।

কবিতা এমন একটি নাম যার মাঝে নিজেকে নিয়ে সাম্রাজ্য গড়া যায়, নিজের মতে করে সব অনুভূতিগুলিকে আপন করে একান্ত নিজের করে খুঁজে পাওয়া যায়। একজন কলম সৈনিকের  সমস্ত ভান্ডার থাকে পরিপূর্ণ। কারণ তার আছে সৃষ্টি করার অপার ক্ষমতা, যা দিয়ে সে মনের সকল পূর্ণতা-অপূর্ণতাকে নির্মাণ করে।

সব শেষে এটাই বলবো কবিরা সর্বদা তাদের নৈপুণ্য ব্যবহার করেছেন সামাজিক সমস্যা এবং অন্যায়ের উপর আলোকপাত করতে, তাদের শব্দ ব্যবহার করে পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করতে এবং চিন্তাকে উস্কে দিতে। প্রাচীন গ্রীক ট্র্যাজেডি থেকে আধুনিক প্রতিবাদী কবিতা পর্যন্ত, কবিতা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

No comments

Powered by Blogger.