কবিতা জোর করে লেখা যায় না ।। শহিদ আজাদ

 
কবিতা জোর করে লেখা যায় না
শহিদ আজাদ

কবিতা নিয়ে আমার ভাবনা আমার নিজের মতো। খুব বেশি ভেবেচিন্তে আমি কবিতা লিখি না। কবিতা আমাকে ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। অর্থাৎ কবিতা যখন লিখি তখন এক একটা লাইন পরবর্তী লাইনকে টানে। পথ দেখায়। কখনো যে উঁচুনিচু পথে হোঁচট খাই না তা নয়। মাঝে মাঝে উপযুক্ত শব্দ এবং উপমা খুঁজে পাই না। লেখা বন্ধ করি। মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকে নানা উপায়। হঠাৎ খুঁজে পাই শব্দ এবং উপমা। কবিতা লেখা হয়ে যায়। কবিতা কী? কবিতার বৈশিষ্ট্য কী? কী হলে কবিতা হবে? এ সব নিয়ে ভাবিও না। হয়তো আমি বুঝিও না। এতটুকু বুঝি কবিতা জোর করে লেখা যায় না। কবিতা লেখা হয়ে যায়। একজন কবি এই আকাশ মন্ডল, মানুষ ও প্রকৃতিকে যেভাবে দেখে যেভাবে তুলনা করে তার কাব্যিক উপস্থাপনাই কবিতা। কবিতা ছন্দময় হতেই হবে। অন্ত্যমিল ছন্দ বা অন্ত্যমিলহীন ছন্দ। কিন্তু ছন্দ থাকতে হবে। সেই ছন্দ শব্দ দিয়ে উপমা দিয়ে কবির অনুভবকে প্রকৃতি নিয়ে মানুষ নিয়ে মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আকাশ মন্ডল নিয়ে ব্যঞ্জনা তৈরী করতে হবে। কবির অনুভব যেন সর্বজনীন হয়। পাঠক যেন মনে করে তার কথাই বলা হচ্ছে তার অনুভবকে কাব্যিক উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের অনুভূতি যখন কবিতায় উঠে আসে তখন কবিতা হয়ে ওঠে সাধারণের অর্থাৎ সকল মানুষের। বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান একদিন বলেছিলেন- “শহিদ যে কবিতাগুলো আমি খুব যত্ন করে লিখেছি সেই কবিতাগুলো অত বিখ্যাত হয়নি আর যে কবিতাগুলো আমি এক বসায় লিখেছি যেমন, স্বাধীনতা তুমি, তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, আসাদের শার্ট এগুলো অনেক বিখ্যাত হয়েছে।” কবি শামসুর রাহমান-এর এই বক্তব্য থেকে আমি এটাই বুঝেছি, যে কবিতা স্বতস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসে সেই কবিতাই হচ্ছে প্রকৃত কবিতা ভালো কবিতা জনপ্রিয় কবিতা।

স্বতস্ফূর্তভাবে বেরিয়ে আসা কবিতা মানুষের মনোজগতের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মনকে উদ্বেলিত করে। এই আলোড়ন সৃষ্টি করার ক্ষমতা এবং উদ্বেলিত করার ক্ষমতা যে কবিতার মধ্যে থাকে সেই কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা।

কবিতায় আরেকটি বিষয় জরুরী। সেটা হচ্ছে রিদম বা তাল বা ঘটনাপ্রবাহ। অনেক সময় রিদম অবশ্য ছন্দ অর্থে ব্যবহার হয়। তবে আমি মনে করি রিদম শুধু ছন্দ নয়। ছন্দের অধিক। যা কবিতাকে সাবলীল করে তোলে। কবিতার শরীর জুড়ে বীণার ঝংকার তুলে এক মোহনীয় দ্যোতনা সৃষ্টি করে। এই দ্যোতনা মূলত: কবিতার স্বতন্ত্রতা যা গদ্য থেকে কবিতাকে আলাদা করে। নিজস্ব স্বকীয়তা তৈরী করে। যে কবি যতো গভীরভাবে মানুষের মনোজগতকে পড়তে পারে। যে কবি যতো নিবিড়ভাবে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং যতো দক্ষতার সাথে শব্দ ও উপমা ব্যবহারের মাধ্যমে কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপন করতে পারে সে ততো বড় কবি হয়ে উঠে। 

আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো খুব দক্ষতার সাথে শব্দ এবং উপমা ব্যবহার করতে পারি না। যে কারণে এখনো খুব ভালো কবিতা লিখতে পারিনি। বিখ্যাত হতে পারিনি। সময়ের ব্যবধানে হয়তো একদিন মানুষের মনোজগতকে আরও ভালোভাবে পড়তে পারবো এবং আরও নিবিড়ভাবে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে পারবো তখন হয়তো আরও ভালো কবিতা লিখতে পারবো।

No comments

Powered by Blogger.