রোখসানা ইয়াসমিন মণি এর কবিতা ভাবনা

 
কবিতা নিয়ে বলতে গেলে কথার শেষ হবে না। কবিতা শব্দটির ভেতরই এর অন্তর্নিহিত ভাব বিদ্যমান। মানে ক দিয়ে কথা, বি দিয়ে বিষয়, তা দিয়ে তাল, লয়, ছন্দ। অর্থাৎ কবিতা হলো, কথা ও বিষয়ের তাল, লয়, ছন্দ। 

কথাকে তাল, লয়, ছন্দে উপজীব্য করাই হলো কবিতা। এখন বিষয় হচ্ছে আমরা কোন কথাকে উপজীব্য করব? এর উত্তর হল যে কথা বজ্রের মতো, আগুনের মতো, বানের মতো, ঝড়ের মতো, সাহস, সত্য, ন্যায়ের মতো, প্রস্ফুটিত ফুলের সুবাসের মতো মনে স্নিগ্ধতা এনে দেয়, চোখ জুড়িয়ে দেয়, সাহসী বীরের মতো সত্যমিথ্যের প্রভেদ শেখায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তলোয়ারের ঝনঝনানি শব্দের মতো হৃদয় নিংড়ে কথা বের করায়, ভালোবাসতে শেখায়, বাঁচতে শেখায় তাই হলো কবিতা। কবিতা বড্ডই অভিমানী। সবার কাছে কবিতা ধরা দেয় না। কবিতাকে যে ভালোবাসে, কল্পনার রঙে ছন্দ, তাল, লয় দিয়ে সম্মান জানাতে পারে কবিতা তারই হয়। কবিতা হলো ইলহাম। এটাও নাযিল হয়। কবিতার ইলহাম সবাই পায় না। কারণ, কবিতাকে সৃষ্টি করতে হয়। যিনি পারেন তাকে কবি বলা হয়। তাই কবির আরেক নাম স্রষ্টা। ভাষার ইলহাম প্রাপ্ত হয়ে কবি কবিতা লিখেন। কবিতা কবির অসাধারণ কল্পনা আর অভিজ্ঞতার ফসল। কবি কল্পনার ফানুসে সবসময় বিচরণ করেন। সে সময় সৃষ্টির ঈশ্বর তার ভেতর মোহ তৈরী করেন। মোহগ্রস্ত হয়ে কবি শব্দের নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে কবিতা লেখেন। যা আমরা পড়ে মুগ্ধ হই, আশ্চর্য হই, হাসি, কাঁদি, বাঁচি, বাঁচাই, ভালোবাসি ও সমস্ত অন্যায় অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। কবিতা থেকে গান হয়। সেই গান শিল্পির গলায় সুরের তরঙ্গ তোলে।

পৃথিবীর সকল গানই কবিতা এবং কবিতা হয়েছে জাতীয় ও রণসঙ্গীত। তাই একজন কবি একসাথে নবী ও স্রষ্টা। তিনি সর্বজনীন। পৃথিবীর সমস্ত কিছুই তাঁর কবিতায় থাকতে হবে সেইসাথে থাকতে হবে ননতুনত্ব ও চমক সৃষ্টির ক্ষমতা।



No comments

Powered by Blogger.