পুনর্জাগরণের সময় সঙ্গীত বা শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম ।। মতিউর রহমান মল্লিক
মৃধা আলাউদ্দীন : কবি, গীতিকার, সুরকার কোন পরিচয়ে আপনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?
মতিউর রহমান মল্লিক : মজার প্রশ্ন, এই প্রশ্নের জন্য তোমাকে স্বাগত জানাই। একজন মানুষের কাছে যেমন তার সব সন্তানই সমান প্রিয়, তেমনি একজন লেখকের কাছে তার সব লেখাই প্রিয়। তবুও আমি বলব, কবিতার সঙ্গে আমার যে যোগসূত্র- সেই যোগসূত্রকেই আমি সবচেয়ে গৌরবের, আনন্দের মনে করি।
মৃধা আলাউদ্দীন: আপনারা সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করতে গেলেন কেন? এটা কি সেই সময়ে খুব জরুরি ছিল?
মতিউর রহমান মল্লিক : শুধু জরুরি কেন? জরুরির চেয়ে জরুরি ছিল। কেননা, আমরা যখন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করি তখন দেশে ইসলামি গানের প্রতি প্রচণ্ড অবহেলা ছিলÑ না রেডিওতে ইসলামি গানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হতো, না টিভিতে। বলতে গেলে ইসলামি গানকে রেডিও, টিভি থেকে খুব কৌশলে সরিয়ে রাখা হত। হামদ-নাত গাওয়া হত ঠিকই কিন্তু ইসলামি গানের যে ধারা বহমান ছিল তা যেন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হলো। অর্থাৎ তখন সেটা জরুরি ছিল; একান্ত জরুরি, যা ইসলামের দুশমনরাও এখন অস্বীকার করতে পারবে না।
মৃধা আলাউদ্দীন: ইসলামি রেনেসাঁস বা পুনর্জাগরণে সঙ্গীতের গুরুত্ব কতটুকু?
মতিউর রহমান মল্লিক : ইসলামি পুর্ণজাগরণের ক্ষেত্রে সঙ্গীতের গুরুত্ব কতটুকু এটা বলার আগে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, প্রচারের ক্ষেত্রে সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে ব্যাপারে দু’একটা কথা বলা যায়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামি আন্দোলনের জন্য সব শ্রেণির মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং ইসলামি জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব অঙ্গনের মানুষকেই তিনি কাছে ডেকেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগের একটা ঘটনা সব সময় আমাকে আলোড়িত করে এবং এ ঘটনাটির মধ্য দিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ইসলামি রেনেসাঁস বা পুনর্জাগরণে সঙ্গীত সাহিত্যকলার গুরুত্ব কতটা ছিল। একবার এক দলপতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললোÑ হে মোহাম্মদ! তুমি তোমার কবিদেরকে ডাক, বক্তাদের ডাক এবং আমিও আমার কবিদের ডাকি, বক্তাদের ডাকি। যারা জয়ী হবে তারাই হবে সত্যবাদী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবাইকে ডাকলেন এবং এক সময় সভা শেষ হলে ঐ দলপতি বললো, এক্ষুণি আমরা সবাই মিলে তোমার কাছে ইসলাম গ্রহণ করছিÑ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে যার মধ্য দিয়ে দিয়ে বোঝা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিদের অপরিহার্যতা, শিল্পীদের অপরিহার্যতা গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। অর্থাৎ কোন দেশে যখন বিপ্লব হয়, তখন সে দেশের মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা তার অনেকটা পূরণ করে শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়করা। সুতরাং রেনেসাঁস বা পুনর্জাগরণের সময় সঙ্গীত বা শিল্প-সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। যেমনÑ আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হলো বৃটিশদের কবল থেকে তখন নজরুলের যে ভূমিকা, আব্বাসউদ্দীনের যে ভূমিকা, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব-এর সেই একই ভূমিকা ছিল।
আফসার নিজাম : ছড়া রাজনীতিকে কতটুকু প্রভাবিত করে?
মতিউর রহমান মল্লিক : আমি মনে করি রাজনীতি ছড়াকে প্রভাবিত করে আর ছড়াও রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। একজন লেখক ছড়া লিখে যখন জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তখন সেই ছড়ার ইমেজ জনগণের মাধ্যমে রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। যেমনÑ গুডবাই কামরুন চললাম / সামনেই মুক্তির সংগ্রাম
আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন : লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
মতিউর রহমান মল্লিক : হ্যাঁ। এটি একটি চমৎকার প্রশ্ন। আমি লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষেই শুধু নই, আমি একটা দেয়াল পত্রিকারও পক্ষে। কারণ একটি দেয়াল পত্রিকাই একটি বড় ধরনের সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা করতে পারে। একটি দেয়াল পত্রিকা থেকেই একজন বড় মাপের কবির জন্ম হতে পারে। রবীন্দ্রনাথের পরিবারে সাহিত্যের চর্চা ছিল এবং পারিবারিকভাবেই তাদের ঐ দেয়াল পত্রিকা বের করার, সাহিত্য সংকলন বের করার একটি পারিবারিক প্রবণতা ছিল। যার কারণেই রবীন্দ্রনাথের মত লোক ঠাকুর পরিবার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তো এটা আমার প্রধান কথা নয়, আমার প্রধান কথা হচ্ছে যে সাহিত্যের জন্যে একটা প্রয়াস থাকতে হয় এবং সাহিত্যের প্রয়াস থাকলেই কখনো কখনো এই প্রয়াসের মাধ্যমে বড় বড় মানুষের আবির্ভাব ঘটে। সেজন্যে আমি শুধু লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষে নই, আমি দেয়াল পত্রিকারও পক্ষে। ছোট ছোট যে কাজ হয় সাহিত্যের, এই ছোট ছোট কাজের প্রতি আমার অসম্ভব সম্মান এবং ভালোবাসা। কোন জায়গায় হয়তো তিন/চার জনের একটা কবিতা পাঠের আসর হয় সেখানে যেতে আনন্দ বোধ করি। কোন জায়গায় হয়তো দেখা গেল যে, ছোট্ট তিন পৃষ্ঠা কি চার পৃষ্ঠার একটা হোল্ডার না কি বলে? (ফুলকুঁড়ি কেন্দ্রীয় অফিসের বিজ্ঞান ও কৃষি সম্পাদক মিজানুর রহমান স্মরণ করিয়ে দিলেন হোল্ডার) এই হোল্ডার বের হয়।
আজকালতো হোল্ডার বের করা খুব সহজ। কম্পিউটার পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের সর্বত্র। বিশেষ করে শহরগুলোতে এখন যারা দেয়ালিকা বের করত তাদের জন্য খুব সহজ হোল্ডার বের করা। এগুলো খুব বড় বড় কাজ। মনে রাখতে হবে, যে দেশের ক্রিকেট টীম অত্যন্ত শক্তিশালী, সে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, গ্রামে গঞ্জে যেখানে একটু চত্বর আছে সেখানেই খেলার ধুম পড়ে যায়। বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জে এখন ক্রিকেট ছড়িয়ে গেছে বলেই জাতীয় টীমে আস্তে আস্তে আমরা ভালো প্লেয়ার পাব।
সেজন্যই লিটল ম্যাগাজিনÑ এটা হচ্ছে সাহিত্যের সূতিকাগার। এখান থেকে সত্যিকার অর্থে সাহিত্য বেরিয়ে আসে। সে সঙ্গে দেয়ালিকা এবং ছোট ছোট আয়োজনই সাহিত্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। যে দেশ সাহিত্যের দিক থেকে অগ্রসর সে দেশে ছোট ছোট কাজ সবচেয়ে বেশি হয়। [এ পর্যায়ে এল সি সির সভাপতি কাজী মোহাম্মদ আসাদুল হক এবং সহ সভাপতি এম বাহাউদ্দিন মাহমুদ কবিকে মেঠো পথ-এর একটি কপি প্রদান করেন। কবি বলেন- এই-ইতো চাই, সাহিত্য সংগঠনের কাজ তো এটাই।]
আহমদ বাসির, আফসার নিজাম, তাজ ইসলাম, শাহাদাৎ তৈয়ব : সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার কাব্যগ্রন্থ ‘চিত্রল প্রজাপতি’র পথিক শীর্ষক কবিতায় আপনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বস্তুত একজন কবি কি কেবল কবিই থেকে যাবে?’ এ জন্যই কি একজন কবি হয়েও আপনি কবিতা রচনার বাইরেও অনেক কাজের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন?
মতিউর রহমান মল্লিক : আসলেই আমার মধ্যে একটি কোমল মন রয়েছে। এই প্রশ্নটি তুমি যখন করছো, তখন আমার মধ্যে কান্না ও বেদনা জমা হয়ে যায়। আমি অনেক সময় চিন্তা করি, এই পৃথিবীই তো একমাত্র শেষ ঠিকানা নয়—এই পৃথিবীর পরেও বিশাল পৃথিবী তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। দেখো শাহাদাৎ তৈয়ব, আমি তো প্রত্যয়বাদী মানুষ। আর আমি যখন প্রত্যয়বাদী মানুষ তখন আমার মধ্যে কিন্তু পরকালের ধারণা কাজ করে, আমার মধ্যে কিন্তু পরকালের ভয় কাজ করে। সুতরাং আমি শুধু একজন কবিকেই এই প্রশ্ন করিনি, সকল মানুষের জন্যই আমার এ প্রশ্ন। এটি আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে, একজন কবি কি শুধু একজন কবিই হবেন? তেমনি একজন খেলোয়াড়ের কাছে আমার প্রশ্নÑ খেলোয়াড় কি কেবল খেলোয়াড়ই হবেন? তেমনি একজন আমলার কাছে আমার প্রশ্নÑ একজন আমলা কি কেবল আমলাই হবেন? তেমনি আমার একজন বিজ্ঞানীর কাছে প্রশ্নÑ একজন বিজ্ঞানী কি কেবল বিজ্ঞানীই হবেন? এই যে আমি ক্রিকেট খেলা পছন্দ করি, আমি ফুটবল খেলা পছন্দ করি... সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি ফুটবল খেলাকে...। তো আমি আমার প্রিয় প্লেয়ারদের দিকেই তাকাই। তারা সারাটা জীবন খেলার মাঠেই দিয়ে দিলো। ঘর-সংসার করার সুযোগটা তারা সেভাবে পায় না। আমাদের দেশের ক্রিকেট আমাদের গৌরব বাড়িয়ে দিয়েছে। এই প্লেয়ারদের মধ্যে দু’জন আত্মীয় আছে আমাদের। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট দলের, যারা এক্কেবারে আমার গ্রামের কাছের প্লেয়ার, ওরা হয়তো আমাকে চেনে না আমি ওদেরকে চিনি। তো এদেরকে দেখেছি যে এরা ঘরছাড়া হয়ে আছে, বাড়িছাড়া হয়ে আছে, সারাজীবন এদের খেলাধূলা নিয়েই চিন্তা করতে করতে চলে গেছে। এরা খেলা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। কিন্তু তারা তো শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, একজন মানুষ; আবার সে তো একজন মানুষই না শুধু, একজন বিশ্বাসী মানুষ। আবার কেবল একজন বিশ্বাসী মানুষই না সে, একজন মুসলমান কিম্বা অন্য কোন ধর্মাবলম্বী, আবার সে তো কেবল একজন মুসলমানই না, সে তো চূড়ান্তভাবে আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ তাকে কীভাবে জীবন যাপন করতে বলেছেন, সে কি তা জানার জন্য চেষ্টা করেছে? সারাটা জীবন সে তার কর্তব্যের বিশেষ জায়গায় ব্যবহার করলো কিন্তু এই মানবতার জন্য সে কী করল? তার আত্মীয়-স্বজনের জন্য সে কী করে গেল? সে কি তা জানার চেষ্টা করছে? সে তার দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনলো কিন্তু দেশে দুস্থ মানুষের জন্য কি কিছু করার সুযোগ ছিল? এই আমার দুঃখী বাংলাদেশের জন্য, এই আমার দুঃখী স্বদেশের জন্য—জর্জরিত স্বদেশের জন্য সে কোন কাজটি করতে পারলো? শুধুমাত্র দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা ছাড়া। কিন্তু যদি আমি পাশ্চাত্য জগতের শিল্পীদের দিকে তাকাই, পাশ্চাত্য জগতের বড় বড় খেলোয়াড়দের দিকে তাকাই, তোমরাও তাদের দিকে তাকিয়ে দেখোÑ তারা কি তাদের সত্তাটাকে কেবল নিজস্ব প্রতিভার জায়গায় জীবনটাকে খরচ করে দিয়েছে? তারা কি করেছে? তারা যতটুকু বুঝেছেÑ তারা তাদের সারাজীবনের সঞ্চয়কে মানবতার জন্য উৎসর্গ করেছে। কেউ পঙ্গুদের জন্য সারাজীবনের সঞ্চয়কে উৎসর্গ করেছে। কেউ বর্তমান সময়ের যে রোগ, এক্কেবারে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জটিল রোগ এইডস, দেখা যাচ্ছে এইডসের জন্য, এইডস রোগীদের চিকিৎসার জন্য একজন বড় মাপের মানুষ তার সমূহ সম্পদ মানবতার জন্য রেখে যাচ্ছে। আবার অনেকে রাখছেন না। সেজন্য আমি এই প্রশ্নটা করেছি। মূলত তুমি কি শুধু কবিতাই লিখবার জন্য এই পৃথিবীতে এসেছো? না কি আরো কোন দায়িত্ব তোমার রয়েছে? তোমার তো একদিন পরকালে জবাব দিতে হবে। জবাব দেবার জন্য কী করেছো? সে জন্য আমি মনে করিÑ আমার যে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের আলোকে আমি যদি আমার জাতির কোন কাজ করি, আমি যদি আমার দেশের জন্য কোন কাজ করি, তাহলে এই প্রত্যেকটি কাজের মধ্য দিয়ে আমি কবিতার উপাদান সংগ্রহ করতে পারি। আমার বিশ্বাসের জন্য আমি কবি হিসেবে যখন কবিতা লিখবোÑ কোন চালাকি করবো না, কোন ফাঁক রাখবো না। তেমনিভাবে, আমি যেখানে যখন কোন কাজ করবো সে কাজের মধ্যে কোন ফাঁক রাখবো না। আমি কবিতা লিখবো পরকালের পরিত্রাণের জন্য, আমি কবিতা লিখবো আমার এই দুঃখী দেশটার দুঃখ জর্জরিত মানুষের জন্য। আমি কবিতা লিখবো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। সুতরাং কবির আরও কোন দায়িত্ব আছে। এ দায়িত্বকে কবিতা থেকে আমি আলাদা করতে চাই না। আমার জীবন থেকেও আলাদা করতে চাই না। আমার মধ্যে যে উপলব্ধি কাজ করে, সেখানে যদি আমি আমার জীবনকে যথাযথভাবে কোরআনের আলোকে সাজাই, সেভাবে যদি কাজে লাগাই তাহলে আমার সামনে এমন এমন কবিতার উপাদান আসবে, যা অন্যদের সামনে আসবে না। দেশ নিয়ে ভাবতেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সে কারণে দেশের জন্য অসংখ্য লেখা রেখে গেছেন। দেশ নিয়ে ভেবেছেন, জাতির জন্য ভেবেছেন। নজরুল ইসলাম জাতির জন্য এক বিরাট সম্পদ। তেমনিভাবে ফররুখ আহমদ আদর্শকে ভালোবেসেছিলেন, জাতিকে ভালোবেসেছিলেন, সেজন্য তাদের নিয়ে কাজ করার প্রেরণা পাই। আদর্শের জন্য উৎসর্গ করার শিক্ষা পাই।
আমিরুল মোমেনীন মানিক : গানে বাদ্যযন্ত্রের বিষয়টা কেমনভাবে দেখছেন?
মতিউর রহমান মল্লিক : এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একটি জটিল প্রশ্ন। আগের দিনের বড় বড় আলেমদের মধ্যে এ সম্পর্কে দুই ধরনের মত ছিল। কেউ কেউ মনে করতেনÑ বাদ্যযন্ত্র হারাম বিষয়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে এমন বলেছেন যে, আমি বাদ্যযন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীতে এসেছি। অনেকে এটাকে সামনে রেখে বলেন যে, বাদ্যযন্ত্রের কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে অনেক আলেম মনে করেন যে, বাজনার কোন দোষ নেই। দোষ হলো এটি কে, কিভাবে, কোথায় ব্যবহার করছে। দ্বীনের বিরুদ্ধে বাজনা ব্যবহৃত হয় সেটি নিঃসন্দেহে নাজায়েজ। কিন্তু যে বাজনা মানুষকে আল্লাহর পথে অনুপ্রাণিত করার কাজে লাগে, তা কেন অবৈধ হবে? এ বিষয়টি নিয়ে আগের দিনেও বড় বড় আলেমগণ প্রশ্ন রেখেছেন। বর্তমান সময়ের অনেক বড় বড় আলেম এ কথা বলে থাকেন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আলেম, শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ আল্লামা কারজাভী বলেছেন, ইসলামি বিপ্লবের জন্য, কিংবা কল্যাণমূলক কোন কাজের ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হলে সেটি হবে মুবাহ। তিনি বাজনার ব্যবহারকে হারাম বা নিষিদ্ধ না করে একটি মধ্যবর্তী সমাধান দিয়েছেন। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে বাদ্যযন্ত্রের উপর গবেষণা হয়েছে। মাওলানা আকরম খাঁ মনে করতেন সব ধরনের বাজনাই জায়েজ। মাওলানা আবদুর রহীম এ বিষয়ে গবেষণা করে বলেছেনÑ যে সব বাদ্যযন্ত্রের নিজস্ব সুর আছে সেগুলো নাজায়েজ। অপর দিকে যে সব যন্ত্রের নিজস্ব সুর নেই, অন্যকেউ সেটাকে কাজে লাগিয়ে সুর তৈরি করে, সেটি বৈধ।
মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম : বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
মতিউর রহমান মল্লিক : বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য সারা বিশ্বেও শিশুসাহিত্যেও চেয়ে মানের দিক থেকে আদৌ নিম্নমানের নয়। এক্ষেত্রে প্রকাশণার সমস্যাই বড় সমস্যা। এবং বাজারজাত করণের ব্যাপারটি ঐল সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সোজা কথায় শিশুসাহিত্যেও হাজার হাজার পান্ডুলিপি পড়ে আছে লেখকদেও ঘরে ঘরে, যৎসামান্য যা প্রকাশিত হচ্ছে তাই দিকে দিকে আলোড়ন তুলছে।
শিশুসাহিত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকরারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক চোখা-নীতি। এবং প্রকাশনা সংস্থাগুলোর অদূরদর্শিতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে দায়ী।

No comments