ভালোবাসার মানুষগুলোকে বুকের ভেতওে ধরে রাখতে হয় ।। মাহফুজুর রহমান আখন্দ

 
ভালোবাসার মানুষগুলোকে বুকের ভেতওে ধরে রাখতে হয়
মাহফুজুর রহমান আখন্দ

আফসার নিজাম : কখন থেকে লেখা শুরু করলেন?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : অষ্টম শ্রেণি থেকেই মূলত লেখালেখির সূচনা। তখন ছড়া লিখতাম। লিখার চেষ্টা করতাম ছড়াগানও। তবে এটি ছিলো লুকোচুরি অধ্যায়। ভেতরে ভেতরে কবি কবি ভাবটা অগ্নিগিরির মতো টগবগ করলেও আমার বড় কাউকে দেখাতাম না। ছোটদের উপর মাতাব্বরী করতাম। বড়কবি হবার স্বপ্ন দেখতাম।

আফসার নিজাম : গান লেখার ইতিহাস জানতে চাই।
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : আমি তখন বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি মাদরাসায় পড়তাম। দশম শ্রেণি থেকেই স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতাম। দেয়ালিকা করতাম। ভাষা, স্বাধীনতা এবং বিজয়; এই তিনটি জাতীয় দিবসে দেয়ালিকা করা হতো। গ্রাম থিয়েটারে গান চর্চার চেষ্টা করতাম। বাড়ির বাইরে থাকি বলে আব্বা-মাকে খুব মিস করতাম। মাকে নিয়ে প্রথম গান লিখলাম ‘কাঁদছো কেনো দুঃখিনী মা কাঁদছো কেনো আর, কেঁদে কেঁদে জীবন কেনো শেষ করো তোমার’। গানটি সুর করে রামচন্দ্রপুর হাই স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে গাইলাম। বাহবা পেলাম। আমার লেখা এবং সুর করার কথা শুনে স্কুলের স্যার খুব খুশি হলেন এবং উৎসাহ জোগালেন। তারপর থেকেই সামনে চলার চেষ্টা। ১৯৯২ সালে সমন্বয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ বগুড়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে গানের মাঠে নিয়মিত হয়েছি।

আফসার নিজাম : সাংস্কৃতিক সংগঠক হতে হলে কি করণীয়?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : সাংস্কৃতিক সংগঠক হতে হলে হৃদয়ের গভীরতা বাড়াতে হবে। মানুষের ভালো গুণগুলো চোখের সামনে রাখতে হবে। মালীর মতো পরিচর্যা করে ফুল ফুটানোর ইচ্ছে এবং আন্তরিক প্রয়াস থাকতে হবে। আমি এবং আমার শব্দ ভুলে গিয়ে আমরা এবং আমাদের মতো করে ভাবতে হবে। নিজে যতোটা জানি তার চেয়ে অন্যের প্রতিভাকে বেশি মূল্যায়ণ করতে হবে। তবে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে মানবতার কল্যাণসাধন, মহান আল্লাহর সন্তোষ, পরকালীন মুক্তি।

আফসার নিজাম : গবেষক হতে চাই, আপনার পরামর্শ?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : প্রতিটি মানুষই গবেষক। সংসারের ঘানিটানা মানুষটিও গবেষণা করেন। কি কাজ করলে তার সংসারে শান্তি আসবে, সুখ আসবে, স্বচ্ছ্বলতা আসবে। গৃহিণীও ভাবেন, কখন কোন রান্না করবো, কি দিয়ে করবো, কোন খাবার তৈরিতে কোনটা ম্যাচিং হয়, কম খরচে কিভাবে সংসারটাকে সুন্দর করে সামনে এগিয়ে নেয়া যায়। মূলত, এ চিন্তা-ফিকির করার নামই গবেষণা। একজন গবেষক পাঠের ভেতরে পাঠ করেন, চিন্তার ভেতরে গিয়ে নতুন চিন্তার উপযোগ সৃষ্টি করেন। গবেষককে প্রচলিত কোন বিষয়ে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করার প্রত্যয়ে অবিরাম ভাবনা, পুনঃপুন তল্লাশী চালানো, একনিষ্ঠভাবে সাধনায় মত্ত থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে নতুন বিষয় আবিস্কারের। তথ্য-উপাত্তের সঠিক বিশ্লেষণ করার মতো একাগ্রতার মানসিক শক্তি অর্জনও একজন গবেষকের মৌলিক গুণ।

আফসার নিজাম : লেখক না শিক্ষক, কোনটিতে বেশি প্রাউড ফিল করেন?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : লেখালেখির স্বপ্ন ছাত্রজীবন থেকে, তারুণ্যের উচ্ছ্বলতায়। লেখকস্বত্তা আমার প্রথম প্রেম। পক্ষান্তরে, শিক্ষক হয়েছি মাস্টার্স শেষে এম.ফিল ডিগ্রি অর্জনের পর পরিণত বয়সে। সুতরাং প্রথম প্রেম লেখালেখি, শিক্ষকতা আজীবনের ঘর-সংসার। দুটোতেই দায়বদ্ধতা, দুটোই আমার প্রাউড- আলহামদুলিল্লাহ। ‘কেউ কারো নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’

আফসার নিজাম : রোহিঙ্গাদের নিয়ে গবেষণা করতে গেলেন কেন?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : আমার গবেষণা যেনো হয় মানুষের জন্য, মানবিকতার জন্যÑ প্রথমত এটাই আমার ইচ্ছে ছিলো। রোহিঙ্গারা যেহেতু পৃথিবীর অন্যতম দুর্ভাগা এবং অধিকারবঞ্চিত জাতি তাই তাদের নিয়ে কাজ করতে আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন আমার সরাসরি শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মুহিবউল্যাহ ছিদ্দিকী। তিনি ককসবাজার বড়মহিশখালীর মানুষ। এখন চট্টগ্রামে বাড়ি করেছেন। তিনি হাতে-কলমে আমাকে গবেষণা শিখিয়েছেন। আমার ইচ্ছে এবং স্যারের অনুপ্রেরণা আমাকে রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছে।

আফসার নিজাম : পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ কি?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : ভালোবাসার মানুষগুলোকে বুকের ভেতরে ধরে রাখা, সকলের মন যুগিয়ে চলা।

আফসার নিজাম : সংস্কৃতির সাথে রাজনীতির মেলবন্ধন কিভাবে আরো দৃঢ় করা যায়? 
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : সংস্কৃতির বিজয় মূলত রাজনৈতিক বিজয়ে প্রাণ সঞ্চার করে। পরিশীলিত সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে একটি জাতিকে আদর্শিক ঐক্যমঞ্চে মিলিত করা যায়। উভয়ের মেলবন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাঠে সুস্থতা ফিরে আনতে হবে। মূল্যবোধ এবং মানবিকতার বিকাশে রাজনীতিবিদগণের মনোযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। অন্যদিকে সংস্কৃতিকর্মীদেরকে রাজনৈতিক দলের ঘরোয়া কর্মী না হয়ে আদর্শিক ও মূল্যবোধের ধারক-বাহক হতে হবে। দলের ইতিবাচক কাজের বিষয়ে যেমন সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে তেমনি নেতিবাচক কাজে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তবে সমালোচনা হতে হবে সংস্কারের উদ্দেশ্যে, গঠনমূলক। উভয়শ্রেণিকে আরো সহনশীল এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মানবতার কল্যাণের মধ্যেই নিজেদের কল্যাণ ও মুক্তি অনুসসন্ধান করতে হবে।

আফসার নিজাম : আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য কি প্রয়োজন?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : ভালো মানুষ হওয়ার অবিরাম চেষ্টা অব্যাহত রাখা। সকলকে সম্মান করতে শেখা। আমার চোখে অন্যকে দেখা, অন্যের চোখে আমাকে পরখ করা। সর্বোপরি, পৃথিবীর জীবনকে পরজীবনের শস্যক্ষেত্র মনে করা।

আফসার নিজাম : লেখকের প্রধান কাজ কি?
মাহফুজুর রহমান আখন্দ : আজীবনের ছাত্র হিসেবে অধ্যয়ন এবং দায়বদ্ধতার নিরিখে লেখালেখি করা।

No comments

Powered by Blogger.