কবি ও কবিতার ভাবনা ।। অধরা আলো

 
কবি ও কবিতার ভাবনা
অধরা আলো

কবিতা হলো লেখকের স্রষ্টা প্রদত্ত আলাদা সত্তা। আমি ছোট বেলা থেকেই খাতায় কথায় কথায় ছোট ছোট শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করে ছড়া লিখে ফেলতাম। আমার হোম টিউটর বলতো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কি কি করো সব এই ডায়রিতে লিখে রাখবে। তার কাছ থেকে প্রথম উপহার সেই ডায়েরিটা ছিলো আমার লেখার অনুপ্রেরণা। আমি বই পড়তে পছন্দ করতাম, গান শুনতাম, বিভিন্ন লেখকের বই সংগ্রহ করতাম।

কবিতা হলো মনের ভেতরে অজান্তেই কিছু শব্দের খেলা, যেটা ভেবে চিনতে লেখা যায় না। যদি তাই হতো তা হলে সব মানুষই কবি বা লেখক হতে পারতেন। তাই মানুষের মধ্যে কেউ কেউ কবি বা লেখকসত্তার অধিকারী। কবিরা হয় ভবঘুরে তারা অন্য মনস্ক হয়ে শব্দের সাথে খেলা করে হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন প্রেক্কাপটে তারা ছন্দ লিখে ফেলো! কবিতা হচ্ছে মনের আবেগ অনুভূতি সুখ দুঃখ হাসি কান্না প্রকাশের বাহক। যার অর্থে ছোট একটা শব্দ দিয়ে বিশালতার সৃষ্টি করা হয়। 

পৃথিবীর সব মানুষ তা সৃষ্টি করতে পারে না। সেই ব্যক্তি বা সাহিত্যিক পারে যিনি কবিত্ব শক্তির অধিকারী। একজন কবি লিখিত বা অলিখিত উভয়ভাবেই প্রকাশ করতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, ঘটনাকে রূপকধর্মী ও নান্দনিকতা সহযোগে কবিতা রচিত হয়। কবিতায় সাধারণত বহুবিধ অর্থ বা ভাবপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় বিভাজন ঘটানো হয়। কবি সাধারণ অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি অথবা প্রচলিত শব্দকে নতুনরূপে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম। একজন কবি কবিতার মাধ্যমে নিজেকে অন্যের চোখে ফুটিয়ে তোলেন। মানুষের ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনা, উন্মত্ততা-উন্মাদনার মধ্যে নিজেকে খুঁজে বেড়ান। তিনি দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণাকে সঙ্গে নিয়ে অকুণ্ঠ বিশ্বাসবোধে রচনা করেন কবিতা।

কবিতার বিষয়বস্তু কাব্যসত্যে ও কাব্যসৌন্দর্যে মানুষের জীবন-জীবিকা এমনভাবে উপস্থাপিত হতে হবে যাতে পাঠক কবির সুগভীর আন্তরিকতা ও বিষয় তন্ময়তা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ প্রকাশ না করে। বরং সত্য ও সুন্দরের উপজীব্য বিষয় খুঁজে পান। কবিতা হলো জীবন ও শিল্পের সমন্বয়ে অনবদ্য সৃজন। 

কবিতার গঠনশৈলী ও শরীর নির্মাণে একজন কবিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। শব্দচয়ন, উপমা, নান্দনিকতা ও ব্যঞ্জনা, অনুপ্রাস, শব্দে, সংগীতে আবেগ ও ভাবে কল্পনার বিষয়বৈচিত্র্য, অনুভূতির নিবিড়তায় কবিতাকে সাজিয়ে তুলতে পারার মুন্সিয়ানাই একজন কবি থেকে আর একজন কবিকে আলাদা করে তোলে। একজন কবির ব্যক্তি প্রেম, দেশপ্রেম কবিতায় আধুনিকতার মূলসূত্র। কবিতায় জৈবিক, অজৈবিক, দেশ কিংবা প্রকৃতির প্রেম, দ্রোহ ও মানবিকতা, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক বিবিধবৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনার চিত্র প্রকৃতভাবে চিত্রিত করেন। 

একজন কবি হবেন তৃতীয় নয়নের অধিকারী, সেই নয়নের মাধ্যমেই কবি তার নিজের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর তিক্ষèদৃষ্টিতে দেখে কল্পনা ও বাস্তবতার সাথে মিল রেখে কবিতার অনুষঙ্গ এবং তার নান্দনিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাব্যিক নানাবিদ ব্যঞ্জনায় নির্মাণ করেন কবিতা। পরম সত্যের অন্বেষণ এবং কাব্যিক সৌন্দর্য সৃষ্টিই কবির উদ্দেশ্য।

No comments

Powered by Blogger.